প্রকাশিত: Tue, Jul 4, 2023 11:45 PM
আপডেট: Mon, Jun 30, 2025 1:35 AM

ব্রিকসে যোগদান বাংলাদেশের জন্য কতোটা সম্ভাবনার

মাহমুদুল হাসান শিবলী: বিশ্বের উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর বৃহত্তম জোট ব্রিকস। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার মত অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশ নিয়ে গঠিত হয়েছে এই জোট। গত ১৪ জুন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন আগস্টে বাংলাদেশ ব্রিকসের সদস্য হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশ এমন সময় এই ঘোষণা দিয়েছে যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব মুদ্রাব্যবস্থায় অস্থিরতা বিরাজমান, বিভিন্ন দেশ বিকল্প মুদ্রায় বাণিজ্যের দিকে ঝুঁকছে। এমতাবস্থায় ব্রিকসে যোগদান বাংলাদেশের জন্য কতোটা সম্ভাবনার!  

(১) 

বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান ব্রিকসে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার ঘোষণাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর বৃহত্তম জোট হওয়ার পাশাপাশি- তাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তির আলোকে এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।  

তিনি বলেন, ব্রিকসে যোগ দিলে এসব দেশের সাথে সম্পর্ক আরও গভীর হবে বাংলাদেশের। বৈদেশিক সম্পর্কে আরও বৈচিত্র্য আনার সহায়ক হবে।

আবার বিবিসি-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্থনীতিবিদ সায়মা হক বিদিশা বলেন, বাংলাদেশ ব্রিকসের সদস্য হলে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটবে, এই রাষ্ট্রগুলোর সাথে বিভিন্ন ধরণের লেনদেন বা বাণিজ্য সম্পর্ক করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের সুবিধা পাওয়া যাবে। সেইসাথে দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ঋণ পাওয়াও সহজ হবে।

(২) 

২০১৫ সালে ব্রিকসের সদস্য দেশগুলো তাদের নিজস্ব অর্থ-শক্তিতে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক  চালু করে। ২০২১ সালে এই ব্যাংকে নতুন সদস্য হিসেবে যোগ দেয় বাংলাদেশ। 

সম্প্রতি চীনের সাংহাইয়ে ব্রিকসের গঠিত নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এনডিবি) বার্ষিক সভায়  অধ্যাপক মুস্তাফিজুর জানান, অক্টোবরে বিকল্প মুদ্রা চালুর বিষয়টি বিবেচনা করছে এনডিবি; এতে বাংলাদেশও তার মুদ্রা এবং মার্কিন ডলারের বাইরে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বহুমুখীকরণে সুবিধা পাবে। অধ্যাপক মুস্তাফিজ মনে করেন, এবার ব্রিকস সদস্য হলে এই ব্যাংকের তহবিল পাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজস্ব মতামত তুলে ধরার বাড়তি শক্তি পাবে বাংলাদেশ।

(৩) 

ভারতের গবেষণা প্রতিষ্ঠা অবজারভার ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী জনসংখ্যা, আয়তন এবং অর্থনৈতিক আকারের দিক থেকে ব্রিকস জোট বর্তমান বিশ্বের একটি বড় শক্তি। যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪২ শতাংশ। এই জোট পৃথিবীর ৩০ শতাংশ এলাকা জুড়ে রয়েছে এবং বৈশ্বিক জিডিপি’র প্রায় ৩১ শতাংশও এ দেশগুলোর। এমনকি বর্তমানে ব্রিকস সম্মিলিতভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ৪৩ শতাংশ (৮ ট্রিলিয়ন ডলার) নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্বের যত পণ্যসেবা উৎপাদন হয় তার ২১ শতাংশ আসে এই পাঁচটি দেশ থেকে। 

(৪) 

১ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে ব্রিকস দেশগুলোর পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পর্ক মন্ত্রীরা একমত হয়ে এক বিবৃতিতে  জানান, সম্প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা, বয়কট, অবরোধের মতোন একতরফা অর্থনৈতিক জবরদস্তিমূলক ব্যবস্থা যে বিশ্ব আর্থিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে । সেই পরিস্থিতি উত্তরনের জন্য ব্রিকস সদস্য এবং তাদের ব্যবসায়িক অংশীদারদের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং আর্থিক লেনদেনে স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার প্রসারের ওপর জোর দিয়েছে। 

এবিষয়ে  সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ এর  গবেষণা পরিচালক  খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কন্ঠ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লিখেন, এই জোটের দেশগুলো এখনো ডলারের ওপরই নির্ভরশীল। বিকল্প মুদ্রা চালু হলে নিকট ভবিষ্যতে জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে লেনদেনে ডলারের ওপর নির্ভরতা কমতে পারে।

তিনি আরো বলেন, এরকম একটি অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে যুক্ত হওয়া বাংলাদেশের জন্য সামর্থ্য প্রমাণের সুযোগ। ফলে পুরো বিষয়টি ইতিবাচক বলা যায়। ব্রিকস জোট অর্থনৈতিক সহযোগিতার চমৎকার একটি উদাহরণ হতে পারে।